অাতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার ::::
চলমান রোহিঙ্গা শুমারীতে কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ৩৭ হাজার পরিবারে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আছে বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্য্যালয়। চিহ্নিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২০ হাজার খানা বা পরিবারকে রোহিঙ্গা পরিবার ও অবশিষ্ট ১৭ হাজার পরিবারকে মিক্স অর্থাৎ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মিলে মিশে বসাবাস করছে বলে চিহ্নিত করেছে গণনাকারীরা। কিন্তু জেলার বেশিরভাগ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার সচেতন মহলের দাবী, উক্ত রোহিঙ্গা শুমারীতে বাস্তব চিত্র উঠে আসেনি। আগে থেকে যে সব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা কৌশলে ভোটার আইডি কার্ড করেছে এবং যারা একটু প্রভাবশালী বনে গেছে তাদের বাদ দিয়ে তালিকা তৈরি করেছে গননাকারীরা। কক্সবাজার পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারি ভাবে প্রথম বারের মত রোহিঙ্গা শুমারী চলছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এ শুমারীতে ১০৮ জন সুপার ভাইজারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১ শত ৮৯ জন গণনাকারী রোহিঙ্গা শুমারীতে অংশ নেয়। এতে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার পরিবারকে চিহ্নিত করেছে গণনাকারীরা। এসব পরিবারে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ হাজার পরিবার শতভাগ রোহিঙ্গা আর বাকী ১৭ হাজার পরিবার মিক্স বা বাংলাদেশিদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করে বলে শুমারীতে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিসংখ্যান অফিসের পরিসংখ্যান সহকারী রাসেল উদ্দীন উপরের তথ্য “মোটামুটি সঠিক” বলে দাবী করেন। তবে এটা প্রকাশ করার মত কোন অফিসিয়াল নির্দেশনা আসেনি তাই প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, খুব অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা বাদ পড়ে থাকতে পারে, সেটা চূড়ান্ত গণনায় চলে আসবে। জানা যায়, জেলার অনাবাদী বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় সরকারী বনভুমি জবরদখল করে দুই তিন দশক আগে থেকে বসতি স্হাপন শুরু করে তৎকালীন বার্মা থেকে আগত অবৈধ রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলী, ঘোনা পাড়া, কলাতলী, সদরের ইসলামপুর ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা বামনকাটা, হাজীপাড়া, ডুলা ফকির মাজার পাড়া, ঈদগাঁও ইউনিয়নের হাছিনা পাড়া, পি এম খালী, খুরুস্কুল ও ভারুয়াখালী ইউনিয়নের পাহাড়ী বিভিন্ন এলাকায় গেঁড়ে বসা রোহিঙ্গারা এখন সমাজের মুলস্রোতে মিশে গেছে। বাংলাদেশীদের সাথে বিয়েবন্ধনে অাবদ্ধ হয়ে জমি কিনে স্হায়ী বাড়ীঘর ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের মালিক হওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয়। একশ্রেনীর জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রধারীও হয়ে গেছে। বাংলাদেশী পাসপোর্টে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা পাড়ি দিয়েছে বিদেশে। এসব রোহিঙ্গা রয়ে গেছে শুমারির বাইরে। সদরের ঈদগাঁও এলাকায় কয়েক বছর ধরে “সাংবাদিকতা” করছে জন্মগত রোহিঙ্গা এক মৌলবী। শৈশবে স্বপরিবারে বার্মা থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী এ পরিবারের সবাই এখন জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ও খুটাখালীতে স্হায়ী হয়েছে। সচেতন মহল জানান, যখন রোহিঙ্গা শুমারী চলছিল তখন বেশির ভাগ রোহিঙ্গা এলাকা থেকে চলে গিয়েছিল ও গণনাকারীরা যখন তাদের কাজ শেষ করে চলে গেছে তখন আবার বাড়ীতে ফিরে এসেছে। তাই বেশির ভাগ রোহিঙ্গা তালিকার বাইরে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে হিসাবে তালিকায় আরো অনেক রোহিঙ্গা আসার কথা।
এ ব্যাপারে জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, গণনার কাজ এখনো শেষ হয়নি তাই কোন সংখ্যা আমি বলতে পারবো না। আমরা সব কাগজ পত্র ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। রোহিঙ্গা শুমারী প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আলমগীর বলেন, কাজ এখনো চলছে তাই সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আর ১ এপ্রিল থেকে ছবি তোলার কথা থাকলেও তা কিছুটা পেছাতে পারে বলেও জানান তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী হয়ে বাংলাদেশী সমাজের মূলস্রোতে মিশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করার দাবী জানিয়েছেন জেলার সচেতন মহল।
পাঠকের মতামত: